|
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ
কায়সার হামিদ মানিক,
|
|
কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লার্নিং সেন্টারে চাকরি হারানো শিক্ষকেরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার সকাল সাতটা থেকে উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশনে সড়ক অবরোধের কারণে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এতে কক্সবাজার-টেকনাফ শহিদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয় এবং কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। প্রচণ্ড গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকা যাত্রী ও চালকেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সকাল থেকে শতাধিক শিক্ষক সড়কে নামলে ধীরে ধীরে আরও শিক্ষক যোগ দেন। এতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানসহ হাজারো গাড়ি থমকে যায়। এনজিও সংস্থার গাড়িও ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারেনি। যাত্রী কামরুল হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে গাড়ি আটকে আছে। প্রচণ্ড গরমে বসে থাকা যায় না, তাই কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বিকল্প পথে যেতে হচ্ছে।আরেক চালক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘গাড়িতে পচনশীল মালামাল আছে। আন্দোলন করলে মাঠে করুক, সড়ক অবরোধ করলে মানুষের কষ্টই বাড়ে। আন্দোলনকারীরা সতর্ক করে বলেন, যদি দাবি মানা না হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওর সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় যুবক ইউসুফ বলেন, বহিরাগত ও রোহিঙ্গাদের চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে স্থানীয়দের চাকরিতে পূর্ণবহাল করতে হবে তা না হলে আমরা চাকরি ফিরে পেতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কক্সবাজার জেলা সমন্বয়ক জিনিয়া শারমিন বলেন, চলমান আন্দোলনে সংশ্লিষ্টদের রাজপথে এসে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন মঙ্গলবার কক্সবাজারের আবারও আন্দোলন হবে। নারী শিক্ষক আসমা খাতুন জানান, আমি ছয় বছর ধরে ক্যাম্পে পড়াচ্ছি। হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। আরেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক নেতারা পাশে নেই। স্থানীয়দের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো এনজিও প্রকল্প চালাতে দেব না। অবরোধে অংশ নেওয়া শিক্ষক রোকসানা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘তহবিল সংকটের অজুহাতে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়াশোনা কঠিন হয়ে পড়েছে। আশ্বাস দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হলেও আমাদের চাকরিতে ফেরানো হয়নি। তাই দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছি। শিক্ষকদের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম শামীম জানান, ‘স্থানীয় শিক্ষকদের স্বপদে বহাল না করা পর্যন্ত ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে দেওয়া হবে না। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দিন দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ তৈরি করা যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের পথেই থাকতে হবে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোছাইন বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন শান্তিপূর্ন শেষ হয়েছে। তবে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১৭৯ জন স্থানীয় শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে আন্দোলনের মুখে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বৈঠকের মাধ্যমে আবার চালু করা হয় এবং এক মাসের মধ্যে ইউনিসেফ তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে তাঁদের পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও তহবিল সংগ্রহ হয়নি। ব্র্যাকের মাধ্যমে ১৫০টি লার্নিং সেন্টার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সেখানে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা নেই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তহবিল সংকট শুধু ইউনিসেফ নয়, বৈশ্বিকভাবেই চলছে। ইউনিসেফ চেষ্টা করছে কিছু সমাধান আনার। কিন্তু সড়ক অবরোধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানোই উত্তম। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ লাখের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। সেখানে প্রায় চার হাজার লার্নিং সেন্টারে আড়াই লাখের বেশি শিশু-কিশোর পড়াশোনা করে। গত ৪ জুন আন্দোলনের মুখে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা হলেও জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে ৩ জুলাই পুনরায় চালু হয়। তখন এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। |
