|
শীতে কাঁপছে বাংলাদেশ
মো: ফয়জুল আলম
|
|
নিউজ ডেস্কঃ শুরু হয়েছে মাঘ মাস। পৌষের বিদায় ও মাঘ মাসের শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত। সারাদেশে হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার দাপটও বেড়েছে। শীতের প্রকোপে কাবু রাজধানীবাসীও। আর এর প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ৪ দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীতে ভোগান্তি বেড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তা- ঘাট ও লোকালয়। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে মানুষের। কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকজনের। রাতে বৃষ্টির মত করছে কুয়াশা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) ফেনীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বার্তা-২৪ কে জানান, গত তিন দিন ধরে ফেনীতে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। ঘনকুয়াশার সাথে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার কারণে সূর্যেরও দেখা মিলেনি। আগামী কয়েকদিনও পরিবেশ এমন থাকবে বলে পূর্বাভাস দেন তিনি।
এদিকে তীব্র শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠিক মতো কাজ করতে না পারায় তাদের আয় উপার্জনে ব্যাঘাত ঘটছে। আবার একটু কাজ করতেই নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। শীত নিবারণের জন্য পুরাতন মোটা কাপড় দোকানে ভিড় করছে মানুষজন। অন্যদিকে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। এদিকে ২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আউটডোর ও ওয়ার্ডে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর চাপ। ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে স্বজনেরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু ও বয়স্কদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেলা শহরের মাষ্টারপাড়া এলাকার রিকশাচালক সামসুদ্দিন বলেন, ‘আগে ভোর বেলা রিকশা নিয়ে বের হতাম। এখন শীতে ভোরে রিকশা বের করতে পারছি না। অন্যদিকে রিকশায় ঠান্ডা বেশি লাগায় যাত্রীও কম পাচ্ছি। এ কারণে আয়-রোজগার কমে গেছে।’ কাজ করতে আসা আবু হানিফ নামের এক দিন মজুর বলেন,’ ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে গত কয়েকদিন কাজে বের হতে পারছিনা। আয় রোজগারও না থাকায় কষ্টে দিন কাটছে। এমন শীত অনূভত হবে তা আগে ভাবিনাই, এবার একটু বেশিই শীত পড়ছে।’ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশুই ডায়রিয়া সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগী।’ আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, খুব তাড়াতাড়ি কমছে না ঘন কুয়াশা। তবে শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। শীত কমতে শুরু করে আবার মঙ্গলবার থেকে মেঘ দেখা দিতে পারে। তাতে কোথাও কোথাও শীতের অনুভূতি তীব্র আকারে আবার বাড়তে পারে। আগামী ৩ দিন ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, শীতের তীব্রতা বাড়বে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত কয়েক দিনে কুয়াশার কারণে সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে। আর ঢাকায় কমেছে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি না থাকলেও সূর্যালোকের স্বল্পতায় তাপমাত্রা বাড়ছে না। ফলে শীতের অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে। আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তীব্রতা ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে না। এতে দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে গেছে। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসের পরিমাণও বেড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। |
