|
ত্রিশালে জমি জমা খারিজ করে দেয়ার কথা বলে লিখে নেয়ার অভিযোগ
মোঃ আব্দুল কাদের
|
|
মোঃ আব্দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জমি নামজারি ও জমা খারিজ করে দেওয়ার কথা বলে এক প্রতারক চক্র শ্বশুর বাড়ির লোকজনের যোগসাজশে কৌশলে (কমিশনের মাধ্যমে) জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সে জন্য ত্রিশাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক ,দলিল লেখক, জমি গ্রহীতা ও শ্বশুর বাড়ীর লোক জনদের দায়ী করে ত্রিশাল থানা বরাবর ও দলিল বাতিলের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলাধীন মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের আব্দুল কাদেরের সহজ-সরল ছেলে সোহাগ মিয়া তার শেষ সম্বল খাগাটি মৌজায় দলিল মূলে প্রাপ্ত ১৭৪৯২ নং দাগে ভিটামাটির ৫ শতাংশ জমির খারিজ ও নামজারি করার জন্য একই গ্রামের আব্দুল মান্নান লেবু মিয়ার ছেলে সারোয়ার আলম ও মৃত ইয়াকুব আলী ফকিরের ছেলে আরিফ মিয়া কে দায়িত্ব দেন। জমির কাগজে কিছুটা অসংগতি থাকায় জমা-খারিজ করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানায় সারোয়ার আলম। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার হঠাৎ করে জমা খারিজ হয়ে গেছে মর্মে তার স্ত্রী বেবি আক্তার,শালিকা শিমুলী আক্তার ও শ্বশুর কাইয়ুম মিয়া জমির খারিজের জন্য কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে বলে সারোয়ারের সাথে ত্রিশাল যাওয়ার জন্য বলে। সোহাগ মিয়া তাদের সাথে ত্রিশাল গেলে সারোয়ার আলম তাকে দরিরামপুর এলাকায় সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক জান্নাতুল ফেরদৌস দিদার সরকারের বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে খারিজের জন্য কয়েকটি স্বাক্ষর করতে বলে। সোহাগ মিয়া স্বাক্ষর দেওয়ার পর বুঝতে পারে এটা দলিল। সোহাগ মিয়া বিষয়টি জানতে চাইলে ও বাধা দিতে গেলে তারা তাকে মারধর করে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী সোহাগ মিয়া জানান, আমার শেষ সম্বল বাড়ি-ভিটার এই জায়গা। আলম ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন চক্রান্ত করে আমার জমি লিখে নিয়ে গেছে। এই জায়গা না থাকলে আমাকে গাছতলায় রাত কাটাতে হবে। বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আমাকে দিয়ে দলিল করিয়ে নেয়ায় আমি দলিল বাতিল ও দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ আহমেদ বলেন, সোহাগের পরিবারের মধ্যে একটা পারিবারিক বিরোধ ছিল। আমরা স্থানীয়ভাবে সেটা সমাধান করে দিয়েছিলাম। দলিল হওয়ার পর ঘটনাটি জানিয়ে সোহাগ আমাকে ফোন দেয়। আমি তখন তাকে বলি জোর করে জমি লিখে নিয়ে গেলে স্থানীয়ভাবে আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে আমরা গ্রহিতার কাছ থেকে জমি এনে দেয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, থানাসহ কয়েকটি জায়গায় অভিযোগ থাকায় পরে আর স্থানীয়ভাবে এটা মিমাংসার পরিবেশ হয়নি। তারপরও তারা আসলে আমরা স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক সবুজ মিয়া জানান, আমি বেশ কয়েকদিন যাবত ট্রেনিংয়ের জন্য ঢাকায় আছি। জমিসংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের আসলেও কিছু করার থাকে না। তারপরও উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছি।
দলিল রেজিস্ট্রির সময় দায়িত্বরত সাব রেজিস্ট্রার(অতিঃ দায়ীত্ব) কামরুজ্জামান কবীর জানান,সোহাগ মিয়া যদি প্রমাণ করতে পারে তার জমি জোরপূর্বক দলিল করা হয়েছে তাহলে তার জমি ফেরত দেয়া হবে।
নবাগত সাব রেজিস্ট্রার উমর ফারুক জানান, আমি এখানে নতুন যোগদান করার পর এই বিষয়ে জেনেছি। এটা আমি আসার আগের ঘটনা। পরে এ ঘটনায় কাউকে শোকজ করেছে কি না সেটা আমার জানা নেই।
অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আতিকুল ইসলাম জানান, সাব-রেজিস্ট্রার স্যারের কথায় আমি দলিল লেখকের বাসায় কমিশনে গিয়েছি। কিন্তু জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে অপর অভিযুক্ত দলিল লেখক জান্নাতুল ফেরদৌস দিদারকে বারবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
|
