|
কক্সবাজারে ৬ বছরেও ফোর মার্ডার মামলায় নেই কোন অগ্রগতি
কায়সার হামিদ মানিক
|
|
কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি ছিল আলোচিত ‘ফোর মার্ডার’ ঘটনা। ২০১৯ সালে রাতে একসঙ্গে চারজনকে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এ মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। আলোর মুখ দেখেনি ভুক্তভোগী পরিবার। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উখিয়ার মধ্য রত্নাপালং এলাকায় সংঘটিত হয় এই হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড। রত্নাপালং এলাকার প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বসতবাড়িতে গভীর রাতে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। জীবিকার তাগিদে পরিবারের পুরুষ সদস্য প্রবাসে থাকায় বাড়িতে ছিলেন রোকেনের স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), তাদের ছোট সন্তান রবিন বড়ুয়া (৫), তার মা সখী বড়ুয়া (৬২) এবং ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)। দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে গলা কেটে চারজনকেই হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ নৃশংস ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া ও সৃষ্টি হয় তীব্র আতঙ্ক। ঘটনার পরপরই কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার অফিসার্স ইনচার্জসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা নিহতদের পরিবারকে শান্তনা দিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, দ্রুতই তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। পরবর্তীতে মামলার পর সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের একটি টিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। তবে এতসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী পরিবার। তাদের ভাষ্যমতে, এই মামলায় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হলেও মূল আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর পার হলেও এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। নিহত ৪ জনের একমাত্র অভিভাবক ও মামলার বাদী প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া বলেন, আমি নিঃস্ব, আমার সবকিছু হারিয়েছি। সরকারের কাছে শুধু আমার ৩ বছরের সন্তানের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, মায়ের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, স্ত্রীর হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, আর আদরের ভাইজির হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেলেও এ মামলার চার্জশিট হয়নি, প্রশাসন কোনো হত্যাকারীকেই শনাক্ত করতে পারেনি। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, কক্সবাজার জেলায় এর চেয়ে জঘন্য কোনো ঘটনা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। স্থানীয় শিক্ষক অংশুমান বড়ুয়া বলেন, ‘এত বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা ন্যায়বিচারের কোনো আলোর রেখা দেখতে পাইনি। রোকেনের সন্তান হারানোর বেদনা, মা ও বোন হারানোর শোক এখনও প্রতিদিন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মামলা আদালতে ঝুলে থাকায় তার মনে এখন শুধু হতাশা ও ক্ষোভ জমে উঠছে। রোকেনের আরেক রিলেটিভ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা শুধু চাই, যারা আমাদের প্রিয়জনদের হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক। ছয় বছর হয়ে গেলেও আমরা ন্যায়বিচারের আশা হারাচ্ছি না। স্থানীয়রা জানান, এই হত্যা মামলার দ্রুত বিচার না হওয়ায় এলাকায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযুক্তরা ধরা না পড়ায় সাধারণ মানুষের মনে ন্যায়বিচার নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। স্থানীয় এডভোকেট মাসুদ বলছেন,এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘসূত্রিতা একদিকে ভুক্তভোগী পরিবারকে হতাশ করছে, অন্যদিকে অপরাধীদেরও সাহসী করে তুলছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোকেন বড়ুয়া বাদী ৪৭/২০১৯ নং ফোর মার্ডার মামলাটির তদন্ত এখনো পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে। আসামি শনাক্ত করে আদালতে তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনস্পেক্টর রাজেশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ফোর মার্ডার মামলাটি আগে আরো ৫ জন অফিসার তদন্ত করেছেন। আমি নিয়েছি ৮ মাস হলো। বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল ও পার্শ্ববর্তী লোকজনের সাথে কথা হয়েছে। গোপন এবং প্রকাশ্যে তদন্ত চলমান রেখেছি। নিশ্চয় ভালো কিছু তুলে আনা হবে। |
