|
আত্মত্যাগহীন নেতৃত্বঃ ক্ষমতার হাততালি নাকি মরিচীকা
এস এম আওলাদ হোসেন
|
|
এস এম আওলাদ হোসেন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।।
জনপ্রিয় নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন। কারণ নেতৃত্ব কেবল ক্ষমতা বা পদমর্যাদার অলঙ্কার নয়; নেতৃত্ব মানে আত্মত্যাগ, দায়িত্ব ও জনকল্যাণে নিবেদন। আত্মত্যাগ ছাড়া নেতৃত্ব ক্ষণস্থায়ী হাততালিতে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা কেবল সেই নেতারাই পান, যারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
জনগণের জন্য সংগ্রাম করা, কষ্ট ভাগাভাগি করা, নিজের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দেওয়া—এসব ছাড়া প্রকৃত নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না। ক্ষমতার চেয়ার হয়তো সাময়িকভাবে দখল করা যায়, কিন্তু আত্মত্যাগ ছাড়া সেই নেতৃত্ব টেকে না। নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন—
A leader…is like a shepherd. He stays behind the flock, letting the most nimble go out ahead, whereupon the others follow, not realizing that all along he is directing them from behind.
অর্থাৎ নেতা মানেই জনগণকে এগিয়ে দেওয়া, নিজের স্বার্থে নয়, বরং জনগণের স্বার্থে সবার আগে দাঁড়ানো।
মহাত্মা গান্ধী (ভারত): অহিংস আন্দোলনের পথপ্রদর্শক গান্ধী একাধিকবার ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন—
The best way to find yourself is to lose yourself in the service of others.”
জনগণের সেবায় আত্মত্যাগের এই দর্শনই তাকে আজও বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নেলসন ম্যান্ডেলা (দক্ষিণ আফ্রিকা): বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি ২৭ বছর কারাভোগ করেন। সেই আত্মত্যাগই তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মুক্তির প্রতীক করে তোলে।
আব্রাহাম লিংকন (যুক্তরাষ্ট্র): দাসপ্রথা বিলোপ ও মানবমুক্তির জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারালেও তার জনপ্রিয়তা আজও অম্লান।
সুকর্ণো (ইন্দোনেশিয়া): স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন কারাগার ও নির্বাসনে কাটিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন—
A nation that does not honor its heroes will not endure long.
এই সকল নেতার আত্মত্যাগই তাদের জনগণের কাছে অমর করে রেখেছে।
যেসব নেতা কেবল বক্তৃতা বা প্রচারণার মাধ্যমে জনপ্রিয় হতে চান কিন্তু আত্মত্যাগে অনীহা দেখান, তারা কখনো জনগণের অন্তরে স্থান পান না। ক্ষমতার মেয়াদ শেষে তাদের নাম বিস্মৃত হয়ে যায়। জনগণ জানে—সত্যিকারের নেতৃত্ব কেবল স্লোগান নয়, বরং রক্ত, ঘাম ও ত্যাগের ফল।
জনগণের আস্থা পেতে হলে একজন নেতাকে অবশ্যই-
দুর্যোগে জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে। ব্যক্তিগত বিলাসিতা ও ক্ষমতার মোহ পরিত্যাগ করতে হবে। সংকটের সময় নীতি থেকে সরে গেলে জনগণ আস্থা হারায়। নিজের জীবনের কোনো না কোনো অংশ জনগণের সেবায় উৎসর্গ করতে হবে।
ইতিহাসের প্রতিটি মহান নেতা প্রমাণ করেছেন—আত্মত্যাগ ছাড়া জনপ্রিয় নেতৃত্ব কেবল মরীচিকা। হাততালির জনপ্রিয়তা টেকসই নয়; স্থায়ী হয় কেবল সেই জনপ্রিয়তা, যা আসে জনগণের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ শিক্ষাটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ত্যাগ ছাড়া নেতৃত্ব নয়, ভোগবাদী ক্ষমতালিপ্সা টিকে থাকে না।
এস এম আওলাদ হোসেন।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
01637654471
|
