|
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার অভিযোগ — আইন ও প্রক্রিয়া
এস এম আওলাদ হোসেন
|
|
এস এম আওলাদ হোসেন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (NSU) এক শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও ছবি প্রকাশের পর থেকে জনসমক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গোটা ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন ওঠেছে — আইন অনুযায়ী কী ধারা প্রযোজ্য হতে পারে, কী হবে প্রক্রিয়া, এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের আইনগত সংস্কার প্রয়োজন — এসব বিষয়ই আলোচ্য এখানে।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (Penal Code, 1860)-এর ধারা 295A এবং কিছু পার্শ্ব ধারা ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে প্রযোজ্য হতে পারে। ধারা 295A এই ধারা অনুসারে—“যে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হিংসাত্মক অভিপ্রায়ে কোনো শ্রেণির নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে — কথারূপে, লিখিত, বা দৃশ্যমান উপস্থাপন বা চেষ্টা করে — ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস অবমাননা করলে, সে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দৃষ্টান্ত দিতে পারে।”
ধারা 298 এই ধারা অনুযায়ী, “যে কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিপ্রায়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ, শোনার সীমার মধ্যে শব্দ করা, কোনো অঙ্গভঙ্গি করা বা দৃশ্যমান বস্তু রাখলে — এক বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা কিংবা উভয় শাস্তি হতে পারে।”
উপরের ধারা দুটি সাধারণভাবে “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” করার অভিযোগ নিয়েই প্রযোজ্য হলেও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হিংসাত্মক মনোভাব (deliberate and malicious intention) প্রমাণ করতে হবে।
বর্তমানে আইন কমিশন বা সংসদে নতুন “ধর্ম অবমাননা আইন” প্রবর্তনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কি না—তা স্পষ্ট নয়, তবে সামাজিক চাপে এ বিষয়ে নানাভাবে দাবি উঠেছে।
১ । মামলা দায়ের অভিযোগকারী (ব্যক্তি, দল বা মুসল্লি) থানায় First Information Report (FIR) দায়ের করবে।
২ । গ্রেফতার পুলিশ অভিযোগ ও প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করবে — রিমান্ড প্রার্থনা হতে পারে।
৩ । তদন্ত পুলিশ তদন্ত করবে — ভিডিও, ছবি, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য, ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি সংগ্রহ করবে।
৪ । চার্জশিট প্রসেস তদন্ত শেষে যদি পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
৫ । বিচার প্রক্রিয়া অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা হবে, আইনগত বিতর্ক ও গুণ-অপরাধ প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হবে।
৬ । দণ্ড যদি অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে আদালত 295A / 298 ধারা অনুযায়ী শাস্তি (কারাদন্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড) দেবে।
৭ । আপিল / উচ্চ আদালতের রিভিউ দোষী বা অভিযুক্ত উভয়পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন, রিভিউ করতে পারবেন।
৮। কার্যকর শাস্তি ও নজরদারি শাস্তি কার্যকর হবে এবং সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করবে।
এই প্রক্রিয়ায় অবশ্যই আইনগত সুনির্দিষ্টতা, ন্যায্য বিচার ও প্রমাণবিহীন অবস্থায় দোষারোপ এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
|
