সময় নিউজ বিডিঃ  ‘আপনার বড় ভাইকে র্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে। এই মুহূর্তে আপনার ভাই র্যাবের কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে সম্ভবত ক্রসফায়ারও দেয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাচাঁতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’

রাজধানীর মীরবাগের বাসিন্দা তামজিদ হোসেনকে (২৭) অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনায় শুক্রবার (৯ এপ্রিল) চার র্যাব সদস্যকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তামজিদের ছোট বোন রাইয়ানা হোসেন (২০) হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। অপহরণকারী এভাবে মুক্তিপণ দাবি করে বলে মামলার অভিযোগে তামজিদের ছোট বোন উল্লেখ করেন।

রাইয়ানা হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই তামজিদ হোসেন বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল আনুমানিক ৯টায় আমাদের মীরবাগের বাসা থেকে উত্তরা যাওয়ার কথা বলে বের হন। বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিজেকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আমার মোবাইল নম্বরে ফোন করেন।

তিনি আমাকে জানান, আমার বড় ভাই (তামজিদ) র্যাব হেফাজতে আছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা ডিবিকে না জানানোর কথা বলেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ বা ডিবিকে এ বিষয়ে জানালে আমার বড় ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেন তিনি।

অপহরণের শিকার তামজিদের বোন এজাহারে উল্লেখ করেন, এই কথা বলেই র্যাবের ওই কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তী সময়ে আমি অনেকবার তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই ব্যক্তি বারবার আমার কল কেটে দেন।

মামলার বাদী বলেন, পরে দুপুর দেড়টার দিকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি আবারও কল দেন। মোবাইল ফোনে আমাকে জানান, আমার বড় ভাইকে র্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হবে। আমার বড় ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন- তা জানতে চাইলে সেই ব্যক্তি জানান, এই মুহূর্তে আপনার ভাই র্যাবের কোন অফিসে আছেন- তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।

রাইয়ানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি ফোনে আমার ভাইকে তার সহযোগীদের দ্বারা মারধর করার শব্দ শোনান এবং আমার ভাইকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে মারধর করা হয়েছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়। সেই নম্বরটি থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি-না আমার কাছে জানতে চান।

ভুক্তভোগীর বোন আরও বলেন, আমি তখন তাদেরকে বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? এক পর্যায়ে র্যাবের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সে আমাকে নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলেন। এ সময় তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবেন।

রাইয়ানা বলেন, পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেই ব্যক্তি আমাকে ফোন করে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবি করা টাকা দিয়ে দিতে বলেন। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, হাত, পা ও চোখ বাঁধা। তিনি কোথায় আছে বলতে পারবেন না।

পরে আমার কাছে মনে হয়, র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা আমার ভাইকে অপহরণ করে কোথাও আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি।

জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া চারজন গ্রেফতার রয়েছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

এদিকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হওয়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) চার সদস্যের বিষয়ে বাহিনীটির সদর দফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটক র্যাব সদস্যরা এমন অপরাধে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের কারাদণ্ড এমনকি চাকরিচ্যুতিও হতে পারে।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে র্যাব সদর দফতরের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে ঘটনাটি সম্পর্কে র্যাব ওয়াকিবহাল হয়েছে। র্যাব তদন্ত করছে, তদন্তে র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে কিংবা তারা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটি বড় বাহিনীর দু’একজনের জন্য র্যাব কলুষিত হোক, এটা আমরা কেউই চাই না। র্যাবের একশ’জন যদি অপরাধ করেন, তাহলে একশ’জনকেই শাস্তির আওতায় আনা হয়। এক্ষেত্রে অন্যায়কারী সদস্যরা চাকরিচ্যুত হয়, এমনকি কারাদণ্ডিতও হয়। র্যাবে চাকরি করা অবস্থায় কেউ যদি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে র্যাব আগে থেকেই কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। অন্যায় করে র্যাবে থাকার সুযোগ নেই।

এর আগে দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে র্যাবের চার সদস্যকে আটক করে ডিএমপির হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘তারা এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেন। ওই ব্যক্তির বোন খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করে। পরে আরও দু’জনকে আটক করা হয়। আরও দু’জন পলাতক রয়েছেন।’

জানা গেছে, আটক চারজনের মধ্যে তিনজন সেনাবাহিনীর ও একজন বিমানবাহিনীর সদস্য। পলাতকদের মধ্যে একজন বিজিবি সদস্য। অন্যজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর সদস্য নন। তিনি সাধারণ মানুষ।

চাঁদা আদায়ের অভিযোগে আটক চারজনের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।